এখনও গ্রেফতার হয়নি প্রতারক মিন্টু, হুমকির মুখে অভিযোগকারীরা

Nov 21, 2023 - 19:26
Nov 21, 2023 - 23:27
 0  117
এখনও গ্রেফতার হয়নি প্রতারক মিন্টু, হুমকির মুখে অভিযোগকারীরা

রাজশাহী প্রতিনিধি : রাজশাহীতে প্রশাসনের নামে মাসোহারা উত্তোলনকারী মিন্টু মিয়া গ্রেফতার হয়নি। তবে, হুমকিসহ আতংকে আছেন তথ্য প্রধানকারী ও অভিযোগকারীরা। ভয়ংকর প্রতারক মিন্টুর বিরুদ্ধে বহু পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলেও এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি প্রশাসন। উল্টো যাদের পক্ষে মাসোহারা উত্তোলন করেন, তাদের দিয়ে হুমকি দিচ্ছেন কল রেকর্ড ফাঁসকারীদের। আতংকে আছেন অভিযোগকারীরা। 

এদিকে প্রতারক মিন্টু নাটোর আদালতে মামলা করেছেন মর্মে একটি কপি তথ্য প্রদানকারীদের দিয়ে ভয় দেখাচ্ছেন।

সংবাদ প্রকাশের পর প্রকাশ্যে আসেন তার সঙ্গে সরাসরি জড়িতরা।ইতোমধ্যে জড়িতরা তাকে বাঁচাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।সাংবাদিকের ভাগিনা পরিচয়ে কথিত সাংবাদিক নিয়ে প্রতারক চক্র এখন মিন্টুর তোলাবাজিতে কাজ করছেন।

কতটা ভয়ংকর এই প্রতারক তা তার কর্মকাণ্ডে প্রকাশ হয়েই চলেছে।প্রশাসনকেও ব্লাকমেইল করতে অভিযানে গিয়ে ভিডিও করে সে।পরে সেই ভিডিও দিয়ে ব্লাকমেইল করে ফায়দা হাসিল করে মিন্টু।

গোদাগাড়ীর রফিকুল হত্যার ভিডিও ফাঁসের মুলনায়ক সে।মিন্টু রাজশাহীর বায়াতে তার দ্বিতীয় বউ নিয়ে গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে  ভাড়া বাসায় থাকেন।তার আসল বাড়ি নাটোর ছাতনী নামক গ্রামে।সে সদর থানার ছাতনী গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে।

সংবাদ প্রকাশের পর থেকে তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেছে ভুক্তভোগীরা।প্রকৃতপক্ষে জেলা ডিবি'র পরিদর্শক আতিকুর রেজা'র লোক সে। বেশি সময় সে আতিকের সঙ্গে অভিযানে থাকেন। একারণে সংবাদ প্রকাশের পর আতিকের হুমকি মুখে পড়েছে অভিযোগকারীরা।পরিদর্শক আতিকুর রেজা দীর্ঘদিন যাবৎ রাজশাহী জেলা ডিবিতে কর্মরত।এর আগেও তার বিরুদ্ধে বহু সংবাদ প্রকাশ হয়েছে।অজ্ঞাত কারণে এখনো তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি কতৃপক্ষ। 

কথিত আছে, আতিক এক কর্মকর্তার আর্শিবাদ পূষ্ট।আতিক দীর্ঘদিন একই স্থানে কর্মরত হওয়ায় গড়ে তুলেছেন শক্তিশালী সিন্ডিকেট।যার মধ্যে-মনি মাইকেল ওরফে মিন্টু।মিন্টু পরিদর্শক আতিকুর রেজা'র মাসোহারা তুলতে গিয়েই অন্যান্য প্রশাসনের নাম ভাঙতে শুরু করেন।বিজিবির সিও'র লোক পরিচয় দিতেন তিনি।বিজিবি দিয়ে অনেককে গ্রেফতার করায় সে।মাদক দিয়ে ফাঁসাতে পটু মিন্টুর টার্গেট এখন অর্থশালী ব্যক্তিরা। জেলায় কেউ তাকে প্রশাসনের লোক,কেউ আবার মাসোহারা উত্তোলনকারী, কেউ আবার পরিদর্শক আতিকুর রেজা'র খাস লোক বলেই জানে। 

সরেজমিনে গিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্র জানা যায়।সাম্প্রতিককালে তার ফাঁস হওয়া বহু রেকর্ড পর্যালোচনা করে নিশ্চিত হওয়া গেছে সরাসরি জড়িত কিছু প্রশাসনের অসাধু কর্মকর্তা'র নাম।কিছু নাম ব্যবহারকারী কর্মকর্তা এই প্রতারকের শিকার হয়েছেন।নাম ব্যবহারকারী আইন শৃঙ্খলার কিছু কর্মকর্তা বিষয়টি অনেক আগেই নিশ্চিত হয়েছিলেন।তারা তাকে গ্রেফতারের চেষ্টাও চালাচ্ছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন প্রশাসনের লোক বলেন,বিভিন্ন স্থান থেকে বিভিন্ন জনের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি প্রতারক মিন্টু ওরফে মাইকেল মাসোহারাসহ সাধারণ মানুষকে হয়রানি করছে। প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তা নামও ব্যবহার করছেন, তখন থেকে তাকে খোঁজা হচ্ছে।খোঁজ নিতে তাঁর বায়া বাসায় গেলে জানা যায় সে গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে বাসা ভাড়া নিয়েছেন।বর্তমানে সে গা ঢাকা দিয়েছে ।কিন্তু ফোনে এখনো তার প্রতারণা চলছে। 

ওই প্রতারকের সঙ্গে সরাসরি কয়েকজন কর্মকর্তা জড়িত বলেও একটি বিশ্বাসযোগ্য সুত্র নিশ্চিত করেছেন।সুত্রের কথা অনুযায়ী কল রেকর্ড বিশ্লেষণে তাঁর প্রমাণ পাওয়া যায়। 

উল্লেখ্য, সম্প্রতি সোর্স মিন্টু গোদাগাড়ীতে কয়েকজন মাদক কারবারি ও সাধারণ মানুষকে ভয় দেখিয়ে অর্থ দাবি করেন।এরকম অনেক অডিও কল রেকর্ড ফাঁস হয়েছে।

অনেকগুলো অডিও কল রেকর্ড থেকে জানা যায়, মিন্টু জেলা পুলিশের সনাতন চক্রবর্তী নামেও ভয় দেখাচ্ছেন।এমনকি ওই অফিসারের সঙ্গে তার কথা হয়েছে মর্মে অর্থ দিলে মামলা থেকে নাম কাটিয়ে দিবেন তিনি।এরকম বহু মামলায় অজ্ঞাত অনেকের নাম কাটিয়েছেন আবার অনেকের নাম ঢুকিয়েছেন।কল রেকর্ডে সনাতন চক্রবর্তীকে এসপির পরে ও ওসির উপরে তাঁর অবস্থান বলে উল্লেখ্য করতেও শোনা যাচ্ছে। 

তবে গোদাগাড়ী সাধারণ মানুষ বলছেন মিন্টু মুলত জেলা ডিবি'র পরিদর্শক আতিকুর রেজা'র লোক। তাঁর নামে মাসোহারা উত্তোলন করাই তাঁর কাজ৷ মিন্টুকে টাকা না দিলে পরিদর্শক তাদের আটক করেন।

অডিওতে তিনি আরও বলেন সম্প্রতি উজ্জ্বল নামে একজনকে তাঁর কথা না শোনায় তাকে তিনি আটক করিয়েছেন।কোথাও গোয়েন্দা পুলিশ, কোথাও বিজিবি'র সিও, পরিচয় দানকারী মিন্টু'র নম্বর দিয়ে সার্চ দিলে সিও মিন্টু নাম ভেসে আসে।এতে অনেকেই বিশ্বাস করতে বাধ্য হয়।এমনকি পুলিশের টুপি পড়া একটি ছবি সে সাধারণ মানুষকে দেখিয়েও তাঁর অস্তিত্বের জানান দেয়। 

প্রসঙ্গত, চলতি বছরে একটি ঘটনায় ১৭ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত সংবাদে চারঘাট থানার ওসি মাহবুবুল আলমের টাকা দাবি'র অডিও ফাঁস হয়।ওসি বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলেও ওই ঘটনায় অপর দোষী ব্যক্তি জেলা ডিবি'র পরিদর্শক আতিকুর রেজার কোন ব্যবস্থা নেয়নি কতৃপক্ষ।সে সময় ওই ঘটনার ওসি ও আতিকুর রেজা'র বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী নারী পুলিশের উদ্ধর্তন মহলসহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করেছিলেন। 

অভিযোগে ওই নারী দাবি করেছেন, ডিবি পুলিশ তাঁর স্বামীকে সাজানো মাদক মামলা জড়িয়ে গ্রেপ্তার করেছে।স্থানীয় প্রতিপক্ষের দ্বারা ম্যানেজ হয়ে ডিবির পরিদর্শক আতিকুর রেজা সরকারের টিম তাঁর স্বামীকে মাদক উদ্ধারের সাজানো মামলায় গ্রেপ্তার করেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।

এদিকে অন্য আরেকটি ঘটনায় ২০২২ সালে তাঁর বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন হয়।সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ ছিলো,২০২১ সালে দেবীপুর গ্রামের আজিজুর রহমানের কলেজে পড়ুয়া ছেলে সাওন আজমকে হেরোইন ও ইয়াবা বড়ি মাদক দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা করেন তিনি।এ সময় স্থানীয় লোকজন ডিবির ওই কর্মকর্তাকে চারিদিক থেকে ঘিরে ফেলে।পরে সাধারন লোকজনের রোষালনে পড়ে সাওন আজমকে ছেড়ে দিয়ে তড়িঘড়ি করে এলাকা ত্যাগ করেন ডিবি পুলিশের এই কর্মকর্তা।

৪ আগস্ট-২০২২ সালে দূর্গাপুরের অপর আরেক ঘটনায় রাজশাহী জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের পুলিশ পরিদর্শক আতিকুর রেজা সরকারের বিরুদ্ধে ৫ লাখ টাকা ঘুষ দাবি ও মিথ্যা মাদক মামলায় স্বামী-স্ত্রীকে ফাঁসানোর অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছিলো।রাজশাহীর দুর্গাপুর পৌর এলাকার দেবীপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেছিলেন ভুক্তভোগীর পরিবারের লোকজন এবং সচেতন গ্রামবাসী। 

সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়েছিলো, জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের পুলিশ পরিদর্শক আতিকুর রেজা সরকার পরিকল্পিতভাবে মাদকদ্রব্য দিয়ে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছেন অসংখ্য মানুষকে। দেবীপুর গ্রামের  মৃত দেরাজ উদ্দিনের ছেলে আমজাদ আলী,একই গ্রামের মজিবর রহমানের ছেলে রহিদুল ইসলামকেও মাদকের মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসিয়েছেন এই কর্মকর্তা।পূর্ব পরিকল্পিতভাবে পুলিশের এই কর্মকর্তা একের পর এক সাধারন মানুষদের মাদকদ্রব্য দিয়ে ফাঁসিয়ে চলেছেন।

এসব বিষয়ে কথা বললে রাজশাহী জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল আলম (মিডিয়া মুখপাত্র) বলেন,আমি বিষয়টি অবগত নই।জেনে বুঝে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow